অর্গানিক খাবার শরীরের জন্যে কতটা উপকারী জেনে নিন ! | Benefits of Organic Food in Bengali 2024

আজকাল আপনি অর্গানিক খাবারের কথা খুব শুনতে পাবেন, কিন্তু আসলে ঠিক কী এই অর্গানিক খাবার? আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এর কী উপকারিতা আছে ? খেলে কোন ক্ষতি হবে না তো, আদেও কি খাওয়া ঠিক? সে সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই তো আজকের এই নিবন্ধটি তাদের জন্য খুবই উপকারী। তো আর বেশি দেরি না করে আমাদের মূল আলোচ্য বিষয়টিকে (Benefits of Organic Food) শুরু করা যাক।

অর্গানিক ফুড কি? What is organic food?

সহজ কথায় বলতে গেলে অর্গানিক ফুড হলো অর্গানিক ফার্মিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত বিভিন্ন দ্রব্য। যেহেতু এই কৃষি পদ্ধতিতে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও উচ্চ ফলনশীল বীজ (GMO) ব্যবহার করা হয় না, জমির উর্বরতা বজায় রাখার জন্য প্রাকৃতিক উপকরণ, যেমন গোবরের সার ও উদ্ভিদ থেকে তৈরি সার ব্যবহার করা হয়। ফলে উৎপাদিত অর্গানিক খাবারে রাসায়নিকের পরিমাণ কম থাকে এবং এগুলো নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত হয়।

অর্গানিক ফুড ভালো না খারাপ? Organic food is good or bad?

অর্গানিক ফুড অনেক উপকার সমৃদ্ধ কারণ এটি প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হয়, কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না এবং পরিবেশের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কযুক্ত। বিভিন্ন সূচনা ও গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে অর্গানিক খাবার খাওয়া মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এই অর্গানিক ফুডের অনেক উপকার আছে, যা নিম্নলিখিত অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে।

অর্গানিক ফুড এর উপকারিতা আছে কী? There are any profits in organic food?  

আমাদের শরীর সুস্থ রাখার প্রথম পদক্ষেপই হল সঠিক খাদ্যাভ্যাস। আজকাল ছোট দোকান থেকে শুরু করে বড়ো বাজার সব খানেতেই সাজিয়ে রাখা রয়েছে ক্ষতিকর রাসায়নিকযুক্ত ফল ও সবজি। খাবারের এইসব ক্ষতিকর দিক থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম একটি সমাধান হচ্ছে অর্গানিক জিনিসের ব্যবহার।

যেহেতু অর্গানিক শাকসবজি এবং শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোনো রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না, তাই এটি নিশ্চিত ভাবে আমাদের দেহের জন্যও অনেক উপকারী। অর্গানিক খাবারের সুবিধা গভীরভাবে অনুভব করা হয়েছে এবং একমাত্র এটিই পারে আমাদের সুস্থ, নিরাপদ, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।

অর্গানিক ফুডের গুনাগুন | Benefits of organic food

বর্তমানে অর্গানিক ফুড বিশ্বব্যাপী এক চর্চার বিষয়, বিভিন্ন গবেষণা ও আলোচনার মাধ্যমে দেখা গেছে যে এই অর্গানিক ফুডে প্রচুর পরিমানে এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের শরীরের পক্ষে খুবই উপযোগী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘হাউজ অব লর্ডস’ এর বিজ্ঞান বিষয়ক এক কমিটির রিপোর্টে বলা হয় যে পশু ও মাছের খাবারের মধ্যে যেসব এন্টি বায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে তার প্রভাবে মানব দেহে নানা মাইক্রোবায়োলজিক্যাল রোগ বাসা বাঁধছে। সেজন্য অর্গানিক ফুড ব্যবহার করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে আমাদের, যা পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ এবং পরিবেশের স্থিতিশীল উন্নয়নের সহায়ক হবে।

পরিবেশবান্ধব : অর্গানিক ফুড প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করে উৎপাদিত হয় তাই এটি পরিবেশের কোনরকম ক্ষতি করে না বরং পরিবেশের সাথে মানুষেরও অনেক উপকার করে থাকে। অর্গানিক ফার্মিং এর দরুন মৃত্তিকার উর্বরতা বজায় থাকে, মাটির ভৌম জল স্তর বৃদ্ধি পায় এবং পুষ্টিকর খাদ্য প্রদান করে।

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ : বাজারের বিক্রি হওয়া বেশির ভাগ খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে ভেজাল থাকে, যা গ্রহণ করে মানুষ ধীরে ধীরে নিজের দেহের ক্ষতি করে চলেছে। গবেষণায় দেখা গেছে সেই জায়গায় অর্গানিক ফুড ব্যবহার করলে কনভেন্সিয়ালি ভাবে উৎপাদিত খাবারের তুলনায় বেশি পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যেতে পারে।

স্বাদে ভালো : অর্গানিক ফুডের মধ্যে প্রকৃতির স্বাদ লুকিয়ে থাকে যা অন্য কোন প্রকার খাবারের মধ্যে পাওয়া যায় না। ভালো স্বাদের পাশাপাশি এটি পুষ্টি শালী ও স্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে, যার ফলে মানুষ এই ধরনের খাবার কে এখন বেছে নিচ্ছে।

রোগ প্রতিরোধ : বিভিন্ন প্রাণীজ খাদ্যসমূহ, যেমন মাছ ও মাংসের উৎপাদনে উচ্চ মাত্রায় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে, যার ফলে মানব দেহে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি দেখা দিয়েছে। তার জায়গায় অর্গানিক ফার্মিং করা হলে আমাদের হৃদযন্ত্র, কিডনির ও স্নায়ু জাত ক্ষতিকর রোগের প্রভাব কমবে।

সমাজের উন্নতি : অর্গানিক ফুড শুধুমাত্র মানব শরীরের জন্যই নয়, বরং এটি আমাদের চারপাশের পরিবেশের জন্যও যথেষ্ট উপকারী। যেহেতু এতে বীজ থেকে শুরু করে, সেচের জল, প্রাকৃতিক খাদ সবই প্রাকৃতিক জিনিস ব্যবহার করা হয় বলে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় কম হয়।

অর্গানিক খাবার কিভাবে চিনবেন? How will you identify organic food ?

1. খাবারের চেহারা: অর্গানিক খাবার এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত ক্ষতিকর খাবার দেখতে কখনোই এক হবে না। যেদিকে নন অর্গানিক খাবারের রঙ খুব গাঢ় হয় সেদিকে অর্গানিক খাবারের রঙ হবে হালকা,আর এসব খাবার দেখতে একদমই প্রাকৃতিক এবং টাটকা হয়।

2. আকৃতি: হাইব্রিড বা রাসায়নিক ভাবে উৎপাদিত ফসলগুলো সাধারণত বৃহৎ আকৃতির হয়, আর অর্গানিক ভাবে উৎপাদিত ফসলগুলো আকারে বিশালাকৃতি হবে না। সব চেয়ে বড় কথা অর্গানিক ফসলের ভেতরে পোকার উপদ্রপ প্রায় থাকে না বললেই চলে, যেটা নন অর্গানিক ফসলে দেখা যায়।

3. খাবারের স্বাদ: অর্গানিক খাবার স্বাদেও যে অতুলনীয় হবে তা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। অর্গানিক শাকসবজি রান্না করার সময় অতিরিক্ত তেল ও মশলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব হবে না, কারণ প্রাকৃতিকভাবেই এ ধরনের খাবার স্বাদে পরিপূর্ণ থাকে।

4. দ্রুত রান্না হয়: নন অর্গানিক খাবারগুলো দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করতে হয় সেগুলি থেকে ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ করতে। অপরদিকে অর্গানিক ফুড রান্না করার ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম সময় লাগে কারণ এতে সেদ্ধ তাড়াতাড়ি হয় এবং কোন ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি থাকে না।

আরো পড়ুন:

FAQs. নিবন্ধ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নাবলী

১. অর্গানিক ফুড এর সুবিধা কি কি?

খাদ্যাভাসে অর্গানিক ফুড নির্বাচন করার অর্থই হল আপনি আপনার জীবন থেকে বিষাক্ত কীটনাশক এবং অন্যান্য ক্ষতিকর জিনিস কে সরিয়ে ফেলেছেন। অর্গানিক ফুড পুষ্টিকর হওয়ায় তা আপনাকে এক সুষম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রায় অবদান রাখতে সহায়তা করে।

২. অর্গানিক ফার্মিং এর উদ্দেশ্য কি?

অর্গানিক ফার্মিং এর প্রধান উদ্দেশ্যই হলো শক্তি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার। জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে, প্রাণী কল্যাণ রক্ষা করতে এবং আঞ্চলিক পরিবেশগত ভারসাম্য ঠিক রাখতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৩.  অর্গানিক ফার্মিং এর প্রধান সুবিধা কী কী?

অনেকেই জানতে চান যে অর্গানিক ফার্মিং এর সুবিধা কি কি, তো ছোট করে সেগুলি বলা হলো – এটি একটি পরিবেশ বান্ধব প্রক্রিয়া, সার্বিক উন্নয়নকে প্রচার করে, স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়, কম মূলধন লাগে কৃষকের, চাহিদা অনেক হওয়ায় রপ্তানির মাধ্যমে আয় হয়, কর্মসংস্থানের উৎস বাড়িয়ে তোলে।

৪. অর্গানিক ফুড এর উদাহরণ কি?

অর্গানিক ফুড এর অনেক উদাহরণ আছে, যেমন সবজির মধ্যে বাঁধাকপি, ব্রকলি, বেল মরিচ এবং টমেটো। আবার বিভিন্ন ফল যেমন আপেল, নাশপাতি, কলা, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি এবং কিউই। বিভিন্ন শস্য যেমন গম, চাল, বার্লি এবং বিভিন্ন ধরণের তৈলবীর জাতীয় খাদ্য। এছাড়াও দুগ্ধজাত খাবার যেমন দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য, যেমন পনির এবং দই ইত্যাদি।

৫. অর্গানিক ফুড কী নিরাপদ?

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে অর্গানিক ফুডে ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতু, রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ সহ অন্যান্য বিষাক্ত বিপাকীয় পদার্থের স্তর অনেক নিম্ন । অর্গানিক খাবারে ব্যবহৃত বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক, প্রোবায়োটিক এবং অন্যান্য সামগ্রী আমাদের নানা রোগের প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

উপসংহার (Conclusion)

স্বাস্থ্যকর, প্রাকৃতিক এবং পার্শপ্রতিক্রিয়া মুক্ত হওয়ার কারণে বর্তমানে অর্গানিক ফুডের চাহিদা সারা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বাজারে এখন অর্গানিক ফুডের দাম কিছুটা বেশি, ব্যবহার ও এখন কম, যার একটি বড় কারণ হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায় খাদ্য উৎপাদনে মানুষের আগ্রহে অভাব।

বিংশ শতাব্দীতে এই পদ্ধতি বিশ্বের কিছু ছোট পরিসর স্থানে শুরু করা হয়, পরবর্তীতে একবিংশ শতাব্দি থেকে এই কৃষি পদ্ধতির চলন বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে দেশ বিদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উৎপাদক, প্রক্রিয়াজাতকারী এবং বিক্রেতা সংযুক্ত হয়েছেন এর সাথে।

“অর্গানিক ফুড” শব্দটির সাথে গত কয়েক বছর আগেই আমাদের দেশের পরিচয় ঘটেছে, তবে অনেকেই অর্গানিক ফুড সম্পর্কিত তথ্য বিশেষ ভাবে জানতেন না। তো তাদের জন্য আমাদের আজকের এই নিবন্ধটি, আশা করছি আমরা সাহায্য করতে পেরেছি আর কোনরকম সমস্যা থাকলে অতি অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন।

Leave a Comment