কৃষকবন্ধু প্রকল্প কীভাবে আবেদন করবেন জানুন বিস্তারিত আবেদন প্রক্রিয়া | Krishak Bandhu Apply 2024

আপনি কি ভাবছেন ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের সাথে যুক্ত হবেন ? আসলে কি এই ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্প ? এর জন্য আপনার কি কি দরকার হতে পারে ? আপনি এই প্রকল্পের আওতায় আসবেনই বা কি করে ? এসব আপনার মাথায় ঘুরছে তাহলে আর চিন্তা করবেন না আমাদের আজকের এই প্রবন্ধটি আপনার জন্য খুবই লাভদায়ক হবে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ভালো উদ্যোগের মধ্যে এই কৃষক বন্ধু প্রকল্প (Krishak Bandhu) সেইরকমই একটি ভালো উদ্যোগ।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা কৃষিকাজের সাথে সাথে নিত্যদিন কার জীবন যাপনের জন্য আর্থিক দিক থেকে স্থিতিশীল পরিষেবা পাবে। আপনি যদি পশ্চিমবঙ্গবাসী এবং একজন কৃষক হয়ে থাকেন তাহলে আজই যুক্ত হন এই ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের সাথে।

তো আর বেশি দেরি না করে আমরা আমাদের মূল কথায় চলে যায়, যে কিভাবে আপনি কৃষক বন্ধু প্রকল্পটি গ্রহণ করতে পারবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জানতে পারবেন।

কৃষকবন্ধু প্রকল্প কি? What is Krishak Bandhu Scheme?

কৃষকদের সহযোগিতার স্বার্থে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি দপ্তর থেকে এই ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পটি চালু করা হয়। এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্যই হল রাজ্যের সমস্ত কৃষকদের কৃষিকাজের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা, কৃষকদের পরিবার গুলিকে আর্থিক স্বচ্ছলতা দেওয়া এবং অকাল মৃত্যুর ঘটনা থেকে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করা।

এই প্রকল্পের আওতায় এখনো অবধি রবিশস্যের জন্য ৯১ লাখের বেশি কৃষককে ২ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকার সহায়তা দেওয়ার কথা এবং খারিফ শস্যের জন্য ৭৯ লাখ কৃষককে ২ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। ধীরে ধীরে এই কৃষক বন্ধু প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত কৃষকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে এবং ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি সহায়তা করা হয়েছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে।

আরো পড়ুন: সেচ বন্ধু প্রকল্প

প্রকল্পের লক্ষ্য | Krishak Bandhu Scheme Purpose

এই ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল পশ্চিমবঙ্গের বসবাসকারী কৃষকদের সামাজিক ও আর্থিক দিক থেকে সামগ্রিক উন্নতি এবং তাদের সমৃদ্ধির পথে সাহায্য করা। কৃষকরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি, তাদের আর্থিক অবস্থার সুধারা, তাদের জীবন যাপনের মান বাড়ানো এবং  তাদের প্রাথমিক মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ এবং সেই সম্পর্কিত সুরক্ষা প্রদান করা।

কৃষকবন্ধু প্রকল্পের সুবিধা | Krishak Bandhu Scheme Benefits

বিভিন্ন সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের জন্য। এই সুবিধা গুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি বিষয়ক তথ্য ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, জমির সুরক্ষা, পশুপালনের সুযোগ এবং ফসল বীমা সহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা। নিচে প্রকল্পের বিভিন্ন সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-

আর্থিক সহায়তা

যদি আপনার কাছে চাষযোগ্য জমি থাকে তাহলে, প্রতি বছর প্রতি একর জমির জন্য ₹১০,০০০/- পর্যন্ত এবং এক একরের কম হলে আনুপাতিক হারে ৪ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দুই কিস্তিতে প্রদান করা হবে। আগে এই প্রকল্পে ২ হাজার টাকা সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকা দেওয়া হতো, এখন তা বেড়ে সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

আরো পড়ুন: অর্গানিক খাবারের উপকারিতা

কৃষকবন্ধু প্রকল্পের জীবন ও ফসল বীমা | Krishak Bandhu Beneficiary

প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত কোন কৃষকের মৃত্যু ঘটলে তাঁর পরিবারকে ₹২ লক্ষ টাকার জীবন বীমা সরবরাহ করা হবে। এর পাশাপাশি কোন দুর্যোগ বা কোনো কারণে ফসলের ক্ষতি হলে সুবিধাভোগীদের কে দুটি কিস্তিতে ফসল বীমা প্রদান করা হবে।

ধান সংগ্রহে অগ্রাধিকার

এই প্রকল্পে যুক্ত কৃষকরা সরকারের ধান সংগ্রহ প্রকল্পের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার সুযোগ পাবে। কৃষকদেরকে যাতে কম দামে মজুদদার দের ফসল বিক্রি না করতে হয় তার জন্য কৃষকরা সরাসরি ভাবে সরকারের কাছে তাদের ফসল বিক্রি করে লভ্যাংশ অর্জন করতে পারবে।

কৃষকবন্ধু প্রকল্পের যোগ্যতা | Krishak Bandhu Apply Criteria

‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পে এখনো অবধি একাধিক কৃষক যুক্ত হয়েছেন এবং আপনার নাম নথিভুক্ত করতে হলে কি কি বিষয়ে যোগ্যতা থাকা আবশ্যক সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

  • ১. কৃষককে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হতে হবে,
    ২. আধার যুক্ত রয়েছে যে ব্যাংক একাউন্ট তার পাস বইয়ের প্রথম পাতার কপি,
  • ৩. কৃষকের বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে,
  • ৪. বাসিন্দা প্রমাণপত্র হিসেবে ভোটার ও আধার কার্ড ইত্যাদি থাকতে হবে,
  • ৫. কৃষকের পাসপোর্ট মাপের বর্তমান সময়ের ছবি,
  • ৬. কৃষকের নামে চাষযোগ্য জমির রেকর্ড অবশ্যই থাকতে হবে,
  • ৭. যদি চাষীর নিজের নামে জমি না থাকে তাহলে সেই জমির দানপত্র বা অন্যান্য তথ্য জমা দিতে হবে,
  • ৮. চাষীর মৃত্যুর পর জীবন বীমার জন্য তার পরিচয় পত্র ও মৃত্যুর যে শংসাপত্র সেটিও জমা দিতে হবে।

কৃষকবন্ধু প্রকল্পের আবেদন প্রক্রিয়া | Krishak Bandhu Apply Process

Krishak Bandhu official website

‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের আবেদনপত্র আপনি অনলাইনে বা অফলাইনে জমা দিতে যেতে পারবেন, অনলাইনে আবেদন করার জন্য, কৃষকদের Krishak Bandhu website: krishakbandhu.net-এ যেতে হবে।

কোন ইন্টারনেট বা সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে আপনি এটি করে নিতে পারবেন খুব সহজেই। আর অফলাইনে আবেদন করার জন্য, আপনাদের নিকটতম ব্লক কৃষি অফিসে বা দুয়ারী সরকার শিবিরে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে।

কৃষকবন্ধু প্রকল্প Website Link

প্রকল্পের প্রভাব

কৃষকদের কাছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পটি এক আশীর্বাদ স্বরূপ হয়ে উঠেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে সাবলীল হচ্ছে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে সেই সঙ্গে তাদের আত্মবিশ্বাস ও কিছু করে ওঠার আশাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন অনেক কৃষক ছিল যারা অর্থের অভাবে ঠিকমতো ফসল ফলন করতে পারত না তারা কিছুটা হলেও এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।

আরো পড়ুন: রাষ্ট্রীয় কৃষি প্রকল্প

FAQs. কৃষকবন্ধু সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নাবলী

১. ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্প কি উপকারী?

আপনি যদি একজন কৃষক হয়ে থাকেন তাহলে ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পটি আপনার জন্য খুবই উপকারী। উপরন্তু এই প্রকল্পের অধীনে ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী কোনো কৃষকের মৃত্যু হলে, মনোনীত বা মৃত ব্যক্তির পরিবার এককালীন অনুদানের জন্য যোগ্য হবেন। ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ টাকা) দেওয়া হয়ে থাকে মৃতের পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে।

২. পশ্চিমবঙ্গে ‘কৃষক বন্ধু’ প্রদানের পরিমাণ কত?

যে সব কৃষকদের ১ একর বা তার বেশি জমি আছে তারা এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই প্রকল্পের জন্য যোগ্য কৃষকরা টাকা পাবেন প্রতি বছর ১০,০০০ তাদের অ্যাকাউন্টে DBT – সরাসরি ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমে। চিন্তার কারণ নেই বর্তমানে যাদের ১ একরের কম জমি আছে তারা আবেদন করলে ৫০০০ টাকা অব্দি পেয়ে যাবেন।

৩. আমি কিভাবে আমার কৃষক বন্ধু ব্যালেন্স চেক করতে পারি?

ব্যালেন্স চেক করতে হলে krishakbandhu.net পোর্টাল খুলুন এবং তারপর হোমপেজের জন্য অপেক্ষা করুন। কৃষকবন্ধু স্ট্যাটাস 2024-এ ক্লিক করুন এবং লগইন পৃষ্ঠায় যান। আপনার ভোটার আইডি নম্বর লিখুন এবং সাবমিট বাটানে ক্লিক করুন। এই পৃষ্ঠায় আপনার অর্থপ্রদানের স্থিতি দেখুন এবং তারপর এটি আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন।

৪. ‘কৃষক বন্ধু’প্রকল্প কোন রাজ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

“কৃষক বন্ধু প্রকল্প” হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষকদের জন্য একটি ফ্ল্যাগশিপ স্কিম এবং এটি 2019 সালে কৃষি বিভাগ চালু করেছিল৷ এই স্কিমটির মাধ্যমে কৃষকের নিশ্চিত ক্রমাগত আয় এবং বীমা কভারেজের মাধ্যমে কৃষক এর আর্থিক দিক কিছুটা পূরণ করে৷

৫. ‘কৃষক বন্ধুর’ জন্য কী কী নথির প্রয়োজন?

নতুন প্রার্থীর প্রকল্পের অধীনে তালিকাভুক্তির জন্য যে যে নথিগুলি প্রয়োজন সেগুলি হল: ভোটার আইডি, আধার কার্ড, জমির নথিপত্র এবং ওয়ারিসন সার্টিফিকেট, ব্যাঙ্ক পাস বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা এবং শেষ পৃষ্ঠা/ চেক (মূল এবং 1 ফটোকপি),আধার লিঙ্কযুক্ত মোবাইল নম্বর এবং ব্যাঙ্ক একাউন্ট।

উপসংহার

পশ্চিমবঙ্গের ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পটি সফলভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এটি একটি প্রশংসনীয় প্রয়াস। এই প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গবাসী কৃষকদের সমৃদ্ধি ও উন্নতির দিকে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে যা সামগ্রিক সমাজের বিকাশে সাহায্য করে। আগামী দিনে এ প্রকল্প আরও এগিয়ে যাবে এবং এর সাথে আরো নতুন নতুন কৃষক বন্ধুরা যুক্ত হবে সেই আশাই করা যায়।

আমরা এই নিবন্ধের মাধ্যমে কৃষক বন্ধু প্রকল্প ব্যাপারে অনেক কিছুই জানাবার চেষ্টা করেছি কিভাবে কি পদ্ধতি আপনি গ্রহণ করবেন, কি কি যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন, কি কি সুবিধা পাবেন সবই আমরা বলেছি। আর যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে হলে অতি অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আশা করছি আমরা আপনার সাহায্য করতে পেরেছি এবং এভাবে কৃষি ও কৃষি বিষয়গত তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে জুড়ে থাকুন।

Leave a Comment