কৃষি কাজের জন্য জল সরবরাহের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রায়শই দেখা যায় সেচের উপযুক্ত জলের সংকটের কারণে আমাদের কৃষক ভাইদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
অপরদিকে জল ব্যবহারের কোন পরিকল্পনা অথবা কোন নিয়ম নীতি বিধি না থাকায় প্রায়ই দেখা যায় জল অপচয়। এটা লক্ষ্য করা গেছে যে পরিকল্পনামাফিক সঠিক জলসেচ ও জল সংরক্ষণের মাধ্যমে উভয় সমস্যার সমাধান সম্ভব। কৃষি ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিকরণের জন্য আমাদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার ২০১৫ সালে এই সেচ বন্ধু প্রকল্প চালু করে।
এই প্রকল্পের সফলীকরণে সরকারি খাত থেকে ৪২০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।
এই প্রকল্প তে এও বলা হয়েছে যে শুধুমাত্র কৃষি কাজের জন্য একটি পৃথক বৈদ্যুতিক লাইন প্রদান করা হবে। কেন্দ্র সরকার জানিয়েছেন যে এই প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ষাট শতাংশ অর্থ তারা দেবেন।
আমাদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়া, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্যই হল দরিদ্র কৃষকদের কৃষিকাজের সাহায্য করা, তাদেরকে ফসল সেচ সুবিধা প্রদান করা।
এই প্রকল্প অনুসারে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের কৃষকদের জন্য ক্ষুদ্র সেচ সুবিধা স্থাপন করেছে। এর ফলে কৃষি ক্ষেত্রে জলের চাহিদা মিটবে, খুব কম অর্থে কৃষকরা, সেচের জন্য প্রয়োজনীয় জল পাবে এবং জলের অপচয় বন্ধ হবে।
সেচ বন্ধু প্রকল্প কী? What is the Sech Bandhu scheme?
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে রাজ্যের কৃষকদের জন্য এই সেচ বন্ধু প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে। এর ফলে কৃষকরা অল্প জল ব্যবহার করে ভালো ফসল ফলাতে পারবে যা তাদের আর্থিক উন্নতিতে সহায়তা করবে।
আমাদের পশ্চিমবঙ্গ একটি অন্যতম প্রধান ধান উৎপাদনকারী রাজ্য। ধান চাষে জলের ভূমিকা অন্যতম। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে আমাদের রাজ্যে প্রায়শই দেখা যায় খরা। এতে আমাদের কৃষকদের আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হতে হয়। এই কৃষক বন্ধু প্রকল্পের ফলে সেইসব সমস্যার দূরীকরণ সম্ভব। কৃষকদের এই দুরবস্থার কথা ভেবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার একটি মাইক্রো – সেচ প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছে যা জলসম্পদ সংরক্ষণ করবে। এটি কৃষকদের ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। এই সেচ বন্ধু প্রকল্প বাংলা কৃষি সেচ যোজনা নামেও পরিচিত।
সেচ বন্ধু প্রকল্পের উদ্দেশ্য
- এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো যথাযথভাবে সেচ পদ্ধতি গ্রহণ করা এবং তার প্রয়োগ করা ও তার সাথে কৃষি জমিকে শেষ ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা।
- জলের পুরোপুরি ভাবে ব্যবহার করে জলের অপচয় রোধ করা।
- জল সাশ্রয়কারী নানা প্রযুক্তিকে গ্রহণ করে তার সঠিক প্রয়োগ করা। জলের উৎসগুলির নিশ্চিতভাবে খেয়াল রাখা।
- কৃষি উন্নয়নে সাহায্য করা। দরিদ্র কৃষকদের বিনামূল্যে ফসল সেচ সুবিধা সহ ফলন এর বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।
- মাইক্রো সেচ সুবিধার ফলে কৃষি ক্ষেত্রে জলের প্রয়োজনীয়তা পূরণ হবে।
- পশ্চিমবঙ্গ সরকার দুটি নির্দিষ্ট সেচ কৌশল চিহ্নিত করেছে। একটি স্পৃঙ্কলার সেচ ও অন্যটি ড্রিপ সেচ। এই দুটি পদ্ধতিতেই জল সংরক্ষণ সম্ভব। ড্রিপ সেচ মেশিনে খরচ প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা এবং স্প্রিংকলার সাইজ মেশিনে খরচ প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। দরিদ্র কৃষকদের জন্য এগুলি বিপুল পরিমাণ অর্থ সুতরাং সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এই মেশিনগুলি তাদেরকে বিনামূল্যে প্রদান এবং ইনস্টল করা হবে।
- এই প্রকল্পটি মূলত সেখানে প্রয়োগ করা হবে যেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম। পুরুলিয়া বাঁকুড়া ও জঙ্গলমহল অঞ্চল জেলা তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এই প্রকল্পটি তাদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
- প্রত্যেক কৃষককে বৈদ্যুতিক পাম্প সেট প্রদান করা হবে।
সেচ বন্ধু প্রকল্পের সুবিধা
- নতুন পাম্প সেটের সাহায্যে কৃষকরা সহজে তাদের জমি জল দিতে পারবেন ফলে ফলন বাড়বে এবং ফসলের মান উন্নত হবে।
- প্রকল্পের আওতায় দেওয়া বাম সেটগুলোর সাথে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া হবে। এতে করে আর কৃষকদের অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারের আশ্রয় নিতে হবে না।
- অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার কমে যাওয়ার ফলে গ্রামাঞ্চলে নিয়মিত বৈদ্যুতিক সরবরাহের উন্নতি হবে।
- সেচের সুবিধা পাওয়ার ফলে ফসলের ফলন বৃদ্ধি হবে এবং কৃষি খাতে সামগ্রিক উন্নতি ঘটবে।
- আর্থিক দুর্বলতার কারণে যেসব কৃষকরা কৃষিকাজ ছেড়ে দিচ্ছে তারা আবার নতুন করে কৃষিকাজের সাথে যুক্ত হবে।
সেচ বন্ধু প্রকল্পের জন্য কারা আবেদন করতে পারবে?
পশ্চিমবঙ্গে যতরকম ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক রয়েছেন সকলেই এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের সকল বাস্তুচ্যুত, সীমান্তবর্তী, অনুন্নত এবং উপজাতি কৃষকরা আবেদন করতে পারেন।
সেচ বন্ধু প্রকল্পের জন্য আবেদন পদ্ধতি | Sech Bandhu Scheme Apply Online Process
দুর্ভাগ্যবশত এই প্রকল্পের জন্য অনলাইন মাধ্যমে আবেদন এখনো শুরু হয়নি। একমাত্র অফলাইনে কৃষকরা এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন। প্রত্যেক আবেদনকারীকে নিজ অঞ্চলের এগ্রিকালচার ডেভলপমেন্ট অফিসার ( Agriculture Development Officer ) এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এই অফিস এডিও অফিস নামে পরিচিত। এডিও অফিসে গিয়ে সেখানে কৃষককে নিজের পরিচয় পত্র বাসস্থানের প্রমাণ পত্র এবং জমির দলিল সহ এডিওর চাহিদা অনুসারে সকল প্রকার নথিপত্র জমা করতে হবে। এরপর সেই দস্তা ব্রিজ গুলি সরকার দ্বারা পুনর্বিবেচিত হবে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই কৃষকরা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। আরো তথ্যের জন্য নির্দিষ্ট অঞ্চলের কৃষি ব্লক অফিস যাওয়ায় বেশি ভালো।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- জমি জরিপের অনুলিপি
- পরিচয় পত্র ( আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড )
- রেশন কার্ডের অনুলিপি
- জাতি পরিচয় পত্র
FAQ. সেচ বন্ধু প্রকল্প | Sech Bandhu Scheme
1.সেচ বন্ধু প্রকল্প কী?
সেচ বন্ধু প্রকল্প হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি উদ্যোগ যা রাজ্যের কৃষকদের সেচ ব্যবস্থা উন্নত করতে সহায়তা করে। প্রকল্পের আওতায়, কৃষকদের বিভিন্ন ধরণের অনুদান এবং সাবসিডি প্রদান করা হয় নলকূপ স্থাপন, ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম ইনস্টল করা এবং অন্যান্য জল-ব্যবহারকারী কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় করার জন্য।
2.এই প্রকল্পের লক্ষ্য কী?
সেচ বন্ধু প্রকল্পের লক্ষ্য হল:
* কৃষকদের জন্য সেচ সুবিধা বৃদ্ধি করা
* জল ব্যবহার দক্ষতা উন্নত করা
* কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা
* কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করা
3.কারা এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারে?
পশ্চিমবঙ্গের বাস্তুচ্যুত, সীমান্তবর্তী, অনুন্নত এবং উপজাতি কৃষকরা এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারেন।
4.প্রকল্পের অধীনে কী ধরণের অনুদান এবং সাবসিডি দেওয়া হয়?
প্রকল্পের অধীনে নিম্নলিখিত ধরণের অনুদান এবং সাবসিডি দেওয়া হয়:
* নলকূপ স্থাপনের জন্য:
* অনুন্নত ও উপজাতি কৃষকদের জন্য – 50% ভর্তুকি, সর্বোচ্চ ₹ 25,000
* অন্যান্য কৃষকদের জন্য – 40% ভর্তুকি, সর্বোচ্চ ₹ 20,000
* ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম ইনস্টল করার জন্য:
* অনুন্নত ও উপজাতি কৃষকদের জন্য – 90% ভর্তুকি, সর্বোচ্চ ₹ 50,000
* অন্যান্য কৃষকদের জন্য – 80% ভর্তুকি, সর্বোচ্চ ₹ 40,000
* কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য:
* অনুন্নত ও উপজাতি কৃষকদের জন্য – 50% ভর্তুকি, সর্বোচ্চ ₹ 50,000
* অন্যান্য কৃষকদের জন্য – 40% ভর্তুকি, সর্বোচ্চ ₹ 40,000
5.এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া কী?
আগ্রহী কৃষকরা তাদের নিকটতম কৃষি ব্লক অফিসে যোগাযোগ করে এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারেন।
উপসংহার
সেচ বন্ধু প্রকল্প কৃষকদের জন্য একটি অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। এই প্রকল্পের সাহায্যে কৃষকদের মধ্যে কৃষি কাজের চাহিদা আরো বেড়ে ওঠে । এই প্রকল্পের সাহায্যে সেচের জল সহজে পাওয়া যায় ফলে ফসলের ফলন বাড়ে।কৃষকরা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেমন পাম্প সেট ব্যবহারের সুযোগ পায় এবং গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকরণ ঘটে। সর্বোপরি কৃষকদের আয় বৃদ্ধি হয়। অতঃপর এই শেষ বন্ধু প্রকল্প সত্যিই কৃষকদের বন্ধু হিসেবে কাজ করে।